হঠাৎ কোথা থেকে

 

সে বলল, তাই শুনলাম।
তার শব্দ ঘূর্ণাবর্ত
হয়ে জড়ায় অতীত স্বপ্ন
আর বর্তমানের তথ্য।

ভালে দেবপ্রতিম ভস্ম,
মুখবাদ্যে ব্রহ্মহুঙ্কার,
তবু শিশুর মতই স্বচ্ছ এবং
স্বেচ্ছাচারী, কাব্যিক।

যেন মতিচ্ছন্ন মূর্ত!
নাকি চল্লিশোর্ধ ভ্রান্তি?
আমি আগেও স্বপ্ন ফেলতাম।
সে কুড়িয়ে যত্নে ধরল।

তার স্বপ্নে আমার স্বপ্ন
দুটি ধারার মতন মিশছে।
তার পুরুষ আমার পৌরুষ
মিশে ঘূর্ণাবর্তে পাকসাট।

তার লিখন – যেন ডঙ্কা,
হতাশা – ধূ ধূ প্রান্তর,
সে কাব্য? নাকি চিৎকার?
তার চিন্তা – অশ্রাব্য।

তার চিন্তা – যথেষ্ট,
তার চিন্তা – অপূর্ব,
তার চিন্তা – অনন্ত
তার চিন্তা পরিব্যাপ্ত।

এই পরিব্যাপ্তি সন্ধান
আমার আকৈশোরের সঙ্গী –
এক সত্ত্বা, যার প্রাপ্তি
আমার স্বপ্নসাধের অন্তিম।

তাই ইতস্তত প্রশ্ন।
সে বলল, তাই শুনলাম –
তার প্রাপ্তি বলতে ভস্ম,
তার ব্যাপ্তি বলতে আত্মন।

যে মুহূর্তে তার স্বপ্ন
শুধু তথ্য হয়ে উঠল,
সব নষ্ট, ঘূর্ণাবর্তে
হতইচ্ছা, গতকাব্য।

মুখবাদ্যে আত্মধিক্কার –
যে মুহূর্তে স্ব-ইচ্ছা
শুধু প্রাপ্তি হয়ে উঠল,
আমার মূল্য বলতে ভস্ম।

আমার ব্যাপ্তি বলতে মৃত্যু।

আ’মরি

 

স্বরবর্ণ শেষ করে ব্যাঞ্জনবর্ণে পৌঁছনো গেলো
তার শুরুটা সহজ
ক-এর কি খ-এর উপরে যথোচিত বিশ্বাস রয়েছে?
এবং খ-এর ক-এর উপরে?
তাহলেই খ-এর ক-এর গাঁদা হয়ে ফুটে উঠবে মন।

তার পরের অংশ অপেক্ষাকৃত জটিল
ক-এর কি বিশ্বাস রয়েছে যে খ-এর বিশ্বাস আছে ক-এর উপরে?
খ-ও বা কি বুকে হাত রেখে বলতে পারে যে,
ক-এর বিশ্বাস এইমত, যে খ-এর বিশ্বাস ক-এর উপরে
নিটোল? বিধিসম্মত? দ্বিধাহীন?

আমরা ছোট থাকতে ভালো থাকতে উপপাদ্য চর্যাপদ্য ভগ্নাংশ সারাংশ নমাস ছমাসের পাশাপাশি
দুলে দুলে বলতে শিখেছিলাম—

“ক-এ কবিতা চলে
খ-এ খগেনের সাথে
ক-এ কবিতা চলে
খ-এ খগেনের সাথে…”

কবিতা কি শেষ অব্দি বিশ্বাস রাখতে পেরেছিল, যে খগেনের কবিতার উপর যে বিশ্বাস,
তা কবিতার খগেনের উপর যে বিশ্বাস,
যে খগেন কবিতাকে বিশ্বাসে মিলাল যে বস্তু,
সে কবিতা খগেনকে, যে খগেন কবিতাকে, এইভাবে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে,
তর্কে তর্কে বহুদূর নিয়ে যেতে পেরেছিল কিনা?

খ-ব্যাঞ্জনায় কাননে-কুটিরে কি ফুটেছিল খইফুল?
ক-স্বরে খেয়াল গেয়েছিল কোয়েলিয়া?
গ-এ “গান থামা থামা” বলে ঈ-এ ঈর্ষা, ই-এ ইন্ধন, আ-এ আর্তরব, অ-এ অসীম অঙ্ক…

বর্ণগুলি প্রয়োজন।
বর্ণগুলি আছে বলে চলরাশি, চলা, পথ চলা, ফেরা
ব ছিল ভাগ্যিস, তাই বিশ্বাস রাখা যায়
ভ না থাকলে না হত ভালবাসা, না ভাঙাভাঙি।

দূর

 

তোমায় ছেড়ে দূরে যাচ্ছি ভাবো?
দূরে যাচ্ছে তোমার ছোটবেলা।
হয়তো যাচ্ছে রাঁচির পাহাড়, পলাশ,
ধুলোর ঝর্ণা, সাপের মণি, শ্মশান।

ওই হারালো সৎসাহস, আর খিদে,
নিমেষমাত্রে পেনাল্টিবক্স, ফাউল!
মায়ের আঁচল, বাবার জামার গন্ধ
তোমায় ছেড়ে ইঞ্চি ইঞ্চি সরছে।

দূরে যাচ্ছে অচিন বাঁশির শব্দ,
সাপুড়ে গ্রাম, বেবাক মুখ্যু উল্লাস,
হয়তো তুমি নিজেও ঠাহর পাওনি—
সঙ্গে যাবে বলে কোমর বাঁধছো।

আপেক্ষিকে দেখছো, তাই কি ধন্ধ?
ভাবছো আমি ভিন ট্রেনে ছুট-ছুটছি?
আমার টিকিট তোমার ভুরুচক্রে,
আমার খোরাক তোমার ভরা শৈশব।

পেটপুরন্ত গিলে তোমার সবটা
টিকিট কেটে তোমার চোখেই দেখছি—
দূরে উড়ছে আমারও দুই বেণী,
দুষ্টু খিদে, নুড়ির আলু, সবজি…

বিছুটি ফুল, হাত চুলকে একশা!
দেখতে দেখতে ঘুম ঘনিয়ে আসছে।
পাহাড় যেমন গা ঢালে পাশ-পাহাড়ে,
তেমনি শুয়ে তোমার বুকে, নিশ্চল।

ট্রেন

 

জলে মস্ত বক—
পাড়ে ছিটকে কাদা
উড়ে ব্যস্ত পাখি
সাঁঝশিকারে চললো।

মাঠে ক্লান্ত দিন,
হাঁটু ভাঙতে কষ্ট,
পিঠে ঝুলছে সন্ধ্যা,
কচি আঙুল নাড়ছে।

ইতস্তত আলোর
একটি-দুটি বিন্দু,
শাঁখের ভীরু শব্দ
ছোটে ট্রেনের জানলায়।

সহসা বাঁশি কাঁদলো—
মুচড়ে আদিগন্ত,
অচেনা মোহে স্তব্ধ,
হৃৎপিণ্ডে, অঘ্রাণ।

মাছচোরের স্বপ্নসঙ্গীত

মৎস্যরাগে স্বপ্ন সাধি, ভুলচুকটি ধোরোনা,
আহা সব চরিত্র কল্পিত তার,
সাজানো ছক, আচার-বিচার,
সাবধানতার নেই তবু মার,
মিল যদি পাও কার সাথে কার,
আমার নামটি কোরোনা।

ধরো সাতসকালে ডোবার ঢালে পিন পড়া নিঃঝুমে
চার খেয়ে মাছ পালিয়ে ধাঁ,
শীতের রোদে এলিয়ে গা
আমি বেঘোর ঘুমে।
স্বপ্নে কিন্তু শামুকরাজ্যে ভৈঁরো রাগের রিলে,
কান না থাকুক মান রাখা চাই তাই সকলে মিলে
আমায় ঠেলল খাস আসনে, নেই ‘টুকু আক্কেলও।
‘সা-পা-ধা-পা’ শুনতে শুনতে চোখ জড়িয়ে এল…

দেখি তানপুরাতে ঝিম ধরানো ভীমপলশ্রী বাঁধা,
মুখচোরাদের বিচার চলছে, জজ ঘুমিয়ে কাদা,
আসামী যতেক চুপ,
আর উকিল বেওকুফ,
লোকে সালিশি নেয় কার?
শেষে আমার উপর ভার,
কারণ চোর বলেই আমার
কাছে ব্যাপার-খানা দিব্যি সরল-সাদা।
মাছ চুরি আর মুখ চুরিতে এমন কি আলাদা?
তবু হাত বাড়িয়ে যেই টেনেছি জজের মুখোশটিকে,
কূল ছাপিয়ে ঘুম গড়ালো সূর্যাস্তের দিকে।

কচলে আঁখি কাঁপতে কাঁপতে শীতে
‘আমি কোথা—য়’ বলে তান মেরেছি পূর্বী রাগিণীতে
ওমা! জলসূর্য তো নয়! কাদের বাড়ির খুকি!
দাদার চিমটি খেয়ে, গালে কান্না আঁকিবুঁকি।
জলের দাগে রক্তরাগে শতেক মাছের দল
হাত বাড়ালেই দিন পনেরো কালিয়া অম্বল
বুদ্ধি করে নরম সুরে যেই ডেকেছি ‘ওলো…’
সত্যি সত্যি বুঝি আমার নিদ্রাভঙ্গ হলো।

আঁতকে দেখি ভুবন আঁধার, তখন ভয়ে কাঁটা,
ছিপছাপাটি চার গুটিয়ে আলের পথে হাঁটা,
তখন দরবারিতে আলাপ ধরছে উটকো ঝিঁঝিঁর পোলা।
দিকচরাচর কুষ্টি কালি গোলা।
এও কি স্বপ্ন? এও কি কল্প? এও কি ভাবের ভোলা?

সাফাই

 

মিথ্যের সাথে সত্য শুয়ে আছে,
তোমার সাথে আমি।
এসব শুধু মনভোলানো ক্ষীরচাপাটি নয়,
তথ্য অনুগামী।

মিথ্যের পিঠে কাব্য দেখল চড়ে –
ভালকিমাচান, হংসেশ্বর, মৌবনী, ঘাটশিলা,
ঢেউ-দামোদর, দুলকি-কাঁসাই, বিষুতবারের হাট,
পঞ্চবটী টিলা।

মইয়ের মাথায় মিথ্যেরকম আকাশ লেগে আছে – গ্রীষ্মবর্ষা লু-বসন্ত;
মইয়ের গোড়ায় কেন্নোকিরিচ মাঠের গল্প কাদার স্বপ্ন; সত্য কোথায়?

মিথ্যের দু’পায়ের ফাঁকে ঝিলিক মারে ছন্দহীনতা –
বাহারি লেজ, উকুনখাকী;
হপ্তার দিন ক্ষারতৈলে মাথা ঘষার থাপ-থাব্‌ড়ে
হা-পুকুর দেয় সাবড়ে!

মিথ্যে একাই চিত্র আঁকে
শোবার সময় মা’কে ডাকে,
ডোবার সময় ভাইকে ডাকে, বোনকে ডাকে,
কেউ না এলে দেওয়াল মুছে নতুন করে চিত্র আঁকে নিত্য একাই।

ও পাড়ায় কাদের ঘরে মিথ্যে মিথ্যে শাঁখ বেজেছে!
আমার ঘরে লক্ষ্মীপুজোর তাক ডুবিয়ে সন্ধ্যে নামল…

সত্যের সাথে সত্য শুয়ে আছে,
আমার সাথে আমি।
এসব শুধু লোকদেখানো দাঁতের পাটি নয়,
তোমার আমার দ্বন্দ্ববিশ্রামী।

সে পাখির গান

 

যে পাখির ফাটা ঠোঁটে মরা পোকা,
বাতাসে নোংরা ঝুঁটি ফরফর,
চেরা লেজ, ছেঁড়া লেজ,
নখের ডগায় বহু বছরের বাকল-শ্যাওলা-নাড়ি,
ম্যানগ্রোভে, কাঁটাঝোপে খেয়ে-বসে আলুথালু
বেড়ানোর ফলে।

সে পাখির গান গাহি মিলিয়া সকলে।

যে পাখির, তেমন দেখতে গেলে, ওড়া নেই,
তাড়া নেই, বেতো ঘোড়াদের পিঠ ঠুকে ঠুকে
উকুন আহার আছে,
গুরুগম্ভীর ঘোলা চোখ আছে, এবং পিচুটি আছে
সে চোখের কোলে।

সে পাখির গান গাহি মিলিয়া সকলে।

যে পাখির দাঁড় নেই, অতএব দর নেই,
ঢং নেই, বুলি নেই, ইতিউতি পরিচিতি নেই।
গরম দুপুরে যার ফ্যাকাসে ডানায় কালো পাঁক ল্যাপা,
শূয়োরছানার মত, ঘুমোতে আরাম বড়
পাঁককম্বলে।

সে পাখির গান গাহি মিলিয়া সকলে।

যে পাখির গান কেউ লিখবেনা
ইঁদুরেরা লিখবেনা,সাপেরাও, ফুলেদেরও চাড় কম,
তাদের মধুর খোঁজ যে পাখি নেয়নি
কোনোদিনও, শাঁস খোঁটেনি কখনও
বুনো ফলে

সে পাখির গান গাহি মিলিয়া সকলে।

যে পাখির ফাটা ঠোঁটে ব্যকরণ ভুল
তবু বুকে বড় তেজ, চেরা লেজ,
পায়ের পাতায় বহু বছরের শিকল ছেঁড়ার দাগ,
খাপখোপে দোষারোপে বসবাস আলুথালু
নিঃসম্বলে।

সে পাখির গান গাহি মিলিয়া সকলে।

বন্ধু

বন্ধু তোমার ঠোঁটে
অন্তরঙ্গ রুধির
সুখের চিত্র নয়
ও তো সুখের চিত্র নয়
 
আমিও এখন এসব 
অল্প অল্প বুঝি
বয়েস বাড়ছে যত
তত বাড়ছে আমার ভয়
 
বন্ধু বলতে পারো
আমার হৃৎপিণ্ডের চাবি  
কাদের অন্ধকূপের
অতলান্ত পাঁকে
 
পুঁতছে কাদের হাতের 
আঙুল, অসদ্ভাবী
মুক্তিপণের জেরে
আমার আমিই ঘূর্ণিপাকে
 
বন্ধু তোমার চোখে
স্বপ্নভঙ্গ নদী
সুখের স্বপ্ন নয়
ও তো সুখের স্বপ্ন নয়
 
আমিই কি হায় তোমার
ঘাতক, কণ্ঠরোধী
তুমিই হয়তো আমার
গোপন স্বপ্নভয়
 
বন্ধু বলতে পারো
কাদের অস্ত্রমুখে
মরছি আমরা জোড়ে
আর স্যালুট মারছে মিথ্যুক
 
হয়তো দেখব কালই
আমিও তোমার বুকে
পুঁতছি হাতের ছুরি
বন্ধু সে আমারও মৃত্যু
 
বন্ধু গল্প করো
সঙ্গহীনতার
সুখের গল্প নয়
তা সে সুখের গল্প না হোক
 
আমায় দাও বইতে
তোমার দুঃখভার
তুমিও হতে পারো
সখা আমার দুঃখবাহক
 
বন্ধু বলতে পারো
দুই হৃদয়ের মধ্যে
লক্ষ লাশের মাথায়
স্পর্শ কাদের মরণ কাঠির
 
সে লাশ তুলছি বুকে
এই ভালবাসার পদ্যে
বন্ধু সেই আমাদের আগুন
বন্ধু সেই আমাদের মাটি
 
যদি বন্ধু এ দুর্দে‌শে
শুধু রক্তগঙ্গা তৃষ্ণা
এ মৃত্যু উপত্যকা
তবে তোমার আমার দেশ না

To hit a dog

It’s easy to hit a dog!

A cow’s holy till you beat her,
a pig’s filthy till you eat her.

It’s easy to hit a dog.

A drunkard’d just stand and sway,
a fly’d not be there anyway.

It’s easy to hit a dog.

A fish just swims deeper and deeper,
and submarines hardly come cheaper – these days.

So it’s just easy to pick up a log
and hit a dog!

তিলক কামোদ

ঘুম, ঘুমের আড়ালে ঘুম,
ঘুমে জড়াল, জড়াল ঘুমের আড়ালে, ঘুমকে ঘিরল দুহাতে ঘুম,
ঘুমের চোখ ছুঁয়ে, দুহাতে চোখ বোজাল ঘুম,
শোনাল ঘুমকে ঘুমপাড়ানি ছড়া,
ছড়া বাঁধল, বাঁধল ঘুমবাঁধনে, ঘিরল দুহাতে, ঘুমকে জড়াল
ঘুম।

ঘুমের দরোজায় কপাট ধরে দাঁড়াল ঘুম,
কাব্যস্মৃতি, স্মৃতিসৃত কথনভাণ্ডে
দুটি মানুষের কাহিনী ছন্দে ছন্দে,
যারা ভেবেছিল দুহাতে বাঁধবে ঘুমকে,
ভেবেছিল সন্তর্পণে বুদ্ধিজালে ফেলে,
বেঁধে হৃদিবাঁধনে, ঘিরবে দুহাতে, ঘিরবে ঘুমকে, ঘিরবে
যে ঘুম ঘুমের ঘোরে তাদের নাম ধরে ডাকে, সেই ঘুম।
এদিকে দরোজা ধরে যে ঘুম অপেক্ষা করে
ছিল, সে পায়ে পায়ে এসে, জড়িয়ে দুহাতে ঘিরল
ঘুম।

সে দুটি মানুষের চোখেও ঘুম জড়াল,
ঘুমের পালঙ্কে
দুজনে তবু একলা সুপ্ত, বুদ্ধিলুপ্ত,
অবোধ, অজ্ঞাতীত, এমনকি হৃদিবিস্মরিত,
যেন ঘুম নয়, তারাই দুটিতে
বাটা ভরা পান গাল পুরে খেয়ে দিল
ঘুম।

ঘুমের পালা ফুরোলে,
প্রহর জাগতে আসে যে দোসর ঘুম,
সেই ঘুমের কাব্য অপিচ অশ্রাব্য,
দীর্ঘ তন্দ্রার পর ভিন্নপথে স্বল্প বিস্তার করে
কাব্যস্বপ্ন, স্বপ্নচ্যুত কল্পাকল্প
বহু মানুষের কণ্ঠরোলে, ক্ষোভের, রোষের আদলে,
সে কণ্ঠে তারা চেয়েছিল, ভেবেছিল ঘিরবে, ঘিরবে শতহাতে,
বেঁধে জাগৃতি বাঁধনে, ঘিরবে শতহাতে, ঘুমকে ঘিরবে,
যে ঘুম ঘুমের ঘোরে তাদের নাম ভুলে থাকে, সেই
ঘুম।

এদিকে তারাও যে স্বপ্নের ভিতরে বসবাসী,
সে দুটি ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্নভাষেরও অধিক স্বপ্নভাষী,
সেই তথ্য সহসা নিদ্রাপাতের মত তাদের ভাসিয়ে
নিয়ে গেল,
এ যেন ঘুম নয়, তারাই সকলে
বাটা ভরা পান গাল পুরে খেয়ে দিল
ঘুম।

ডুবুড়ি

– বেশি ক্ষণ নেই মোটে, তাই শীঘ্র যাত্রা নাওঘটিকায়,
সঙ্গে যাবে কোন্‌ হুলো? তার খবর বিনেই পুকুর পাড়ি লকলকিয়ে।
– ব্যাঙেদের রায় বেরোবে সবসমক্ষে উশুল আদায়,
কানভাঙানি ছন্দে এবং ঘণ্টরাগে আলাপচারী দাঁত দেখিয়ে
প্রশ্ন করবে – একলা? নাকি আদেখলা?

– চাঁপা ফুল মত্ত মহুল খোঁপার কিলিপ টোপর ঝিলিক ডাঙার তথ্য
সব ত্যাজিয়ে অন্ধকারে শালুক-শাপলা-কচুরপানা।
ওঠ ছুঁড়ি তোর জাহাজ ডুবছে পদ্মপাতায় জলের মত,
বিন্তিকমল, ঘুণ্টিকমল, আধকপালে জঙ্গিয়ানা।
– তারা নাকি পাল্লা দেবে! বসতে পিঁড়ি! চুষতে মাখন!
উল্টে বরং তারাও তখন ক্লান্ত হাতে শমন লিখবে –
একলা? নাকি আদেখলা?

– বেশি ক্ষণ নেই মোটে আর, তাই ঝাঁপানি ঝুপ্‌ঘটিকায়,
চুলের দড়ি, হাতের নোঙর, আঁধার রাজ্যে কাদার বালিশ।
ঝাঁঝির রাণী লক্ষ্মীমণির সাগর সেঁচা ঘাটপাঁচালি,
ঘুমপাড়ানি ছন্দে পাঠ্য, তাই চেটে খায়
বোয়াল মাছে, একলা এবং আদেখলা।।

ছোট ছড়া ১১

বনতুলসীর গন্ধ নিই,
বাক্সজানলা বন্ধনী,
ফ্রেমের ছবি, তাই বলে কি করবেনা?

কাঠের পালিশ পাঁচ আঙুলে,
সত্যি বলছি, তোমায় ছুঁলে
আমারটাও এক কাগজে ধরবেনা।

ছোট ছড়া ১০

আকাশে জলের ছায়া কালো,
কারা তাকে কবিতা শেখালো
ঝোড়ো শব্দে? আদিগন্তসীমা
গোধূলি উড়েছে এত! চোখে মেঘ…ঢলপূর্ণিমা…

ছোট ছড়া ৯

অবশেষে, বধূবেশে অবন্তী বড়ালও
শীতের সীমন্তপথে, হা-ক্লান্ত খোলস ফেলে অযথা গড়ালো।
দ্রোহক্ষতে অনুলিপ্ত আদ্যন্ত গোধূলি,
কর্ষহীন সান্ধ্যভ্রমণসঙ্গী কনে-দেখা-আলো।

অক্লান্তগুঞ্জন

বড় মুখর হলেন প্রভু।
তাঁকে কত নিরস্ত করা!
তিনি আলাপমুখর তবু।

তাঁর এটাই বোধহয় খেলা।
এই কুস্তিছন্দ, আড়লয়,
না’তো এমন সন্ধ্যাবেলা
কেউ সৃষ্টিকল্পে বার হয়!

তাঁকে গীতচ্যুত করলে
শেষে নিজের ভাগেই কমতি,
তাই অপেক্ষমান অন্তিম।
তিনি আলতোকণ্ঠে ধরলেন
মালকোষ যে মুহূর্তে –

সব স্তব্ধ স্বতঃস্ফূর্তে।
সে কি মুগ্ধে, নাকি ত্রস্তে, সে কে বলবে?
তিনি জবরদস্তি স্রষ্টা –
যেন ধ্যাষ্টা‌মোর মতন।
তাঁর গোঁয়ার-গীতি অনির্বা‌প্ত –
অক্লান্তগুঞ্জন।

ছোট ছড়া ৭

তোমায় গুগল মেলে লিখলে প্রেমের মন্ত্র
সবাই যুগলবন্দী কুকুর বলে দুষছে,
বরং এমনি রাখো – আঙুল-কাটা যন্ত্রে,
যেমন আর সকলে সত্যি কুকুর পুষছে…

ছোট ছড়া ৬

সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল,
ঘোড়ার চেয়ে হস্তী ভাল,
বাড়ির চেয়ে বস্তি ভাল,
প্রেমের চেয়ে দোস্তি ভাল,

আমার মতে সবের থেকে
একলা একলা মস্তি ভাল।

ছোট ছড়া ৫

‘মিছিল থেকে পালিয়ে গেছে পাখি…’
সবজান্তা বল্লে দাড়ি চুমরে।
আমিও তাকে তোল্লা দিয়ে চুপটি মেরে থাকি,
পায়ের তলায় পালক, শরীর পিষছি মুচড়ে, দুমড়ে।

ছোট ছড়া ৩

সস্তার গুড়, ছোলা,
রুটির টুকরো –
শুক্রবারের বাসী।
শিরা ওঠা
ঘাড়, গলা,
বারমাসই খিদে,
পেটে চড়া –
পচে ঢোল আঘাটার মড়া মানে
বস্তা বিধেয়।

বেহুলাগীত

জানো, জুড়লে পাখা অভিনন্দন,
উড়লে নিন্দেমন্দ তখন।
ফন্দি? সে তো বিন্দুমাত্রে,
জলদগর্ভে না।

ভালবাসতে-বাসতে লগ্ন অতীত –
হাসতে হাসতে বেহুলাগীত।
সস্তায় সে কি ভেজার পাত্র!
ব্যাবসা করবেনা!

তবু ভরসা, কারণ আকাশপথে
(ঘরসাজানোর কৈফিয়তে)
বর্ষাকালেও মিলন জমবে,
ছিটকোবেনা পাঁক।

বিনিমাগনা শুনলে মেঘমল্লার,
(রাগ না চিনতে খাটনি বেকার)
তাতেই বিঘ্ন যাত্রারম্ভে –
মহাদুর্বিপাক।।

পথে

সম্ভবত দোষ আর কারো নয়, আশ্বিন মাসের;
ফোটা মাত্র কিরণে ঝরার সাধ জাগে শিউলিদের।

দারুণ মসৃণ ভুরু, চোখে রোদ, তন্দ্রা অথবা
তৃষ্ণা, হয়তো মায়া তথা গার্হস্থ্য-পাবন, রক্তজবা।

কল্পনায় যাত্রা এত স্মৃতিক্লিষ্ট, নিঃশব্দ ছিল কি!
উচ্চকিত ছিল, আরো দ্বৈত ছিল, ভবিষ্যতমুখী —

দ্বিধাহীন, ভাগ্যহীন, লজ্জাহীন, পিতৃমাতৃহীন,
চিন্তাহীন, ভাষাহীন, ভারহীন, দৃশ্যত স্বাধীন।

পালকে ভাসছে পথ আপাতত, গন্তব্য নেই কোনো;
তারও হয়তো ভালো লাগছে একা একা স্টিয়ারিং ঘুরোনো।

এখনো কি বর্ষশেষ…

কুম্ভ জরতী কামার্থে ধৃতা,
অল্প সময়ের অপরিচিতি,
মুগ্ধমেধা, হৃদি পুষ্পাকুলা,
হত বসন্তের অর্ধস্মৃতি।

লগ্ন বিফলে সমস্ত বৃথা,
ভ্রান্তিমোচনের মন্দগতি,
সন্ধ্যাকাশে শেষ রক্তগুলাল
আভাসে উদাহৃত স্বপরিণতি।

মগ্ন মহাদেশ — ঝঞ্ঝাবায়ে
উৎচকিত চূড়া, নৃত্যরোলে
লিপ্তপদাঘাত সর্বনামে —
সত্য ত্যাজে, তথা মিথ্যা ভোলে।

স্তম্ভ গুরুভার প্রৌঢ়কায়ে;
অহো কি অপ্লব দিন যাপিলে!
বর্ষ গেল, ভূত স্কন্ধারামে,
কাব্য রচিবে কি অজাতমিলে?

ম্যাজিক রাণীর বন্ধু হবি?

 

চিতল মাছের মুইঠ্যা রেঁধে নাম রেখেছি চৈতালিক,
হাত ঘুরোলেই পয়দা হবে টুপির মধ্যে দুই শালিক।
ভাগ্যে যদি দুর্বিপাক,
অমনি হাঁকলি কার্ডিয়াক!
কি শিখলি ছাই ঢপের খেলা বেদম ঐন্দ্রজালিক?

পান সুপারি ভেট দিলে লাল করতে পারি শাদারে
তাই দেখে তুই ঘাবড়ে ডেকে আনলি মেজোদাদারে!
এ-ও যদি অস্বস্তিকর,
আমার সঙ্গে দোস্তি কর,
ভোজের বাজি বেচতে পাবি হপ্তাবাজারে।

এমন মন্ত্র পড়ব, যে মুখ দেখবি অনুবীক্ষণে।
ম্যাজিক রাণী মক্ষী আমি আমার কাছে শিক্ষা নে।
আন লিখে এক দরখাস্ত,
ছল শেখাবো জবরদস্ত,
লোক চরাবি তখন — ভেক বদলে প্রতিক্ষণে।

আজ প্রভাতে একলা-চিত্ত কটকটাচ্ছে বড্ড কি?
হাওয়ার পায়রা ঘুঁটের কুকুর কেবল শঠে শাঠ্য কি?
যদিও আমি ফন্দিবাজ,
চল পাতাবো সন্ধি আজ,
কিনবি যদি হাপ্ প্রাইসে যাদুর ফিকির ফাঁকি।

পুনর্জলোজন্ম

বৈঠা বাইছো কাদের তরে?
সেইতো ঘন্টা কতক পরে
বালি ঠেকবে তাদের পায়ে।

সইতে পারলে ভাসাই ভালো।
তাই-কি জলেই আগুন জ্বালো?
মীনজন্ম সোনার কাঠি?

নাইতে করলে আবার বেলা;
হয়তো তাতেই মজলো ভেলা।
খালি শ্যাওলা জমলো গায়ে।

ছইতে ঢাকছো কাদের শরীর?
ওইতো ভগ্নাবশেষ তরী –
দিন ফুটতে ফুটতে মাটি।

তোমার নৌকো ভাসছে দূরে;
ওদের পুনর্জন্মপুরে
এবার জোয়ার আসছে। সামাল!

ওরাও আমার মতই কাঙাল।

দাঁড় বাইছো কাদের তরে?
কারো সামর্থ্য নেই ঘরে;
তাই বালির বসতবাটি।

সইতে পারলে ডোবাই ভালো।
তাই-কি জলের আগুন জ্বালো?
ঘাইজন্ম সোনার কাঠি।

জাগলারিনী

বরাবর অকাজ-পাজি,
নিমেষমাত্রে ভিননগরে চোঁ চা,
পুড়ে ছাই আতসবাজি,
লণ্ডভণ্ড খামখেয়ালের খোঁচায়।

যত খেলা খণ্ড হরে,
ধরা পড়লেই মরার ভয়ে কাঁটা,
চরাচর নিন্দে করে,
ভ্রমণক্ষেত্র আহ্লাদী আঘাটায়।

ইল্লুতে অস্বাস্থ্যকর,
তাই জোরাজোর শিকড় সংস্থাপন,
খিল্লিতে সারস্বত,
বীণ বাজিয়ে মিচকে জীবনযাপন।

ক্ষুধাহীন জগৎ মিথ্যা ,
তবুও চিন্তা চিমটি অসৈরণ,
দশহাতে জাগ্ল্ কৃত্যা
ধাঁই ধড়াধড় সর্বতঃ পতন…

004

দর্পণে বিম্বিত আজি

একে বক্ষ দ্বি-বিভক্ত, তাতে স্কন্ধে তিনটি মাথা,
চতুর্পদে হোঁচট-রক্ত, পঞ্চযোনি অনাঘ্রাতা,
ষড়াঙ্গুলে নখসম্ভার, সপ্তকন্ঠে কিচিরমিচির,
অষ্টহস্ত জগদম্বা, উপমাংস আনখশির,
নয় বগলে কৃষ্ণকেশর, দশোষ্ঠী বিম্বাধরী,
লোলচর্ম ধূম্রধূসর – কি সুন্দরী! কি সুন্দরী!

আয়ানী

সুখের ওপারে আগে ছিল শুধু শব্দ,
ইদানীং স্বামী সকলই অসুখলব্ধ!
গাগরীভরণ অযাচিত ঘটপটনেই;
দধি গুরুপাক – আমরা তো আর ছোট নেই!

যমুনার তীরে জনহীন সূর্যাস্তে –
বাল্যে স্বামিন্ হেনকালে তুমি আসতে।
ননী চুরি থাকে গোপবালকের মজ্জায়;
রাতভর খেলা পদপল্লব চর্যায়।

সেই একই হাত, শুধু নীল কোন বিষে তা!
একই স্বেদ ভালে, কোন পাঁকে তবে দূষিতা?
কুঞ্চিতকেশ দৃষ্টি ঢেকেছে নাথ হে;
চেনা কলরোল তপ্ত কর্ণপটহে।

অধুনা খবর রটেছে শহরে ভাগাড়ে –
ছোবলায় রাতে ঢোঁড়াসাপ একনাগাড়ে!
তাই নিশিচারী, ঢাকি পদছাপ যতনেই;
দধি গুরুপাক – আমরা তো আর ছোট নেই!

যেখানে বাঘের ভয় 

জন্ম নিয়ে বাঘশতকে
`ছা’ বললে কি ছাড়া পায়?
কাদের ছাগল! কারা খায়!

দন্তী না শৃঙ্গী না,
মারকাটারি ভঙ্গী না।
ভয়ের বেলুন ফাটাবে?
চোদ্দ বাঘে চাঁটাবে।

অতঃকিম
তা দিয়ে যায় ভীতুর ডিম,
অন্ধকারে দাঁড়ায়না,
ঘাসবনে ফড়ফড়ায়না,
বাঘডহর-ই মাড়ায়না।

বাঘের-ও তো বেঘো বুদ্ধি –
শেষটা এসে বলল যদি
`আমার সঙ্গে শয়ন কর্’?

ওরেব্বাবা! ভয়ংকর!

আয়নানগর

গতরাত জাল ফেলাতে পড়ল ধরা হলদে খবর,
এঁঠো হাত, আঁশটে সকাল, প্রতিচ্ছবি – আয়নানগর।
বহুদূর দিচ্ছে পাড়ি মাল্টিপদে নিউরোনেরা,
মিঠে সুর বুকপকেটে – যেই সবেরা তেঁই বসেরা।
যেন এক বৃদ্ধ পাচক ফোড়ন মারছে গঙ্গাজলে,
বৃথা ঠেক স্বর্গদ্বারে – সেই কুচিয়ে নাক কাটালে।
মরি হায়! ঠাঁই কোথা পাই! খাসবুনোটে সোনার তরী!
হামেশাই ইচ্ছে জাগে বিন্ টিকিটে যাত্রা করি…

বেলা দ্বিপ্রহর

ক্লান্ত অতি, সিক্ত আকেশর,
তীক্ষ্ণ রোদে চড়ে ডাইনোসর;
বন্যপুষ্পে সুগন্ধ আনোখা,
ঘুরঘুরোচ্ছে ঘুরঘুরোনো পোকা।

জয়জয়ন্তী ঝালার সপাট তান
খেলাচ্ছলে ধরল কাদের খোকা;
যদিও সঠিক সমস্ত বানান,
ঘুরঘুরোবেই ঘুরঘুরোনো পোকা।

অন্তরালে বিশ্ব যথাযথ
বৃক্ষ এবং দুঃখহরণরত,
হাত বাড়ালেই আনন্দঝরোকা;
ঘুরঘুরাতীত – ঘুরঘুরোনো পোকা।

প্রেমপত্র

কি বিচিত্র দেশ দেখালি সত্য সেলুকাস!
দন্ডে মুন্ডে আন্ডা মেখে ভর্তা করে খাস।
রূপে তোমায় গোলাবো না গো, ময়দা ঠেসে গোলাবো,
গান্ডে পিন্ডে বিশ্রী কান্ডে ভবি তোমার ভোলাবো।

কি বহিত্রে দাঁড় টানালি সত্য সেলুকাস!
তিতিবিরক্ত ঘর্মসিক্ত দারুণ ভাদ্রমাস।
ওই দেখ গো আজকে আবার পাগলী জাগে মাস্তুলে,
রিক্ত হাতে তাল ঠুকে খায় শুক্তোভাতে, পাল তুলে।.

কি প্রচন্ড খাল কাটালি সত্য সেলুকাস!
অত্র তত্র যাত্রা বন্ধ পঞ্জিকা সন্ত্রাস।
খ্যায়ের, পায়ের জবা হয়েই ফুটুক তোমার কুসুম মন,
পাত্রাপাত্র-বিভেদ ছেতরে – অর্ধরাত্রে সমর্পণ।

কি হন্ডাতে স্টার্ট মারালি সত্য সেলুকাস!
বহ্নিশিখা দেয়ালা করে – তুই বেয়ালা বাজাস!!
কোথায় ছিলেন বাপ এতকাল? কোন শ্রাবস্তী? মালয়ে?
ক’য় পেয়ালা সাঁটিয়ে এলেন ভোঁ-গাড়ি টালটালয়ে?

.

মার্কেটিং

যেমন নাচাও তেমনি নাচি – হামিলটুনি সার্কিটে,
প্রাতঃকালে নাক মুছিয়ে দিচ্ছ বেচে মার্কেটে।
যদিও তেমন ক্রিম মাখিনি, জিন পেয়েছি দ্রৌপদীর –
কৃষ্ণবর্ণা, অগ্নিকন্যা, দন্তরুচিকৌমুদী।.

আগুনতাতে মুক্তকেশে যতই ধরুক মরচে পেন্ট,
ঈষত হলুদ দাঁতের পাটি – সকাল বিকেল পেপসোডেন্ট।
ক্রিম না মাখি, থাক মেচেতা, চাঁদের ওটাই অলংকার –
তাতেই কাব্যে বেচলে আমায়, শতেক ক্রেতা কলমকার।.

এহাত ঘুরে ওহাত বিকোই – তাও মরেনা বদভ্যাস,
ভালই জানো কাহার তরে শ্যাম্পু আতর গোলাপখাস!
সেই ধানীরং চওড়া আঁচল, যেমন তোমার পছন্দ –
আজ না এলে মাখবনা ক্রিম, রাগ অভিমান অরন্ধন।.

লোহার শিকে খিমচে আঙুল, ব্যাকুল নয়ন গবাক্ষে,
ছিটছে গায়ে নোংরা কালি, কর্ণ ভরছে কুবাক্যে।
তাওতো তেমন ক্রিম মাখিনি, ধ্যাবড়া কাজল চবনপ্রাশ –
তাতেই পড়শী কুচ্ছো গাইছে, পথিক ফেলছে দীর্ঘশ্বাস।.

পথ চেয়ে এই জানলাবাজি – ছটরফটর ঘাসফড়িং,
হয়ত তুমি ঠিক পেছনেই, মাথায় খেলছে মার্কেটিং।
যেমন খেলাও তেমনি খেলি – শরীর ধূলোয় ধূলাক্কার –
তোমার মতন বেচতে জানলে অধম কবেই পগারপার!

তনয়া

হয়ত আঙ্গুল ছুঁয়ে
লেগেছে তোমার ভালো,
তেমনি রয়েছো শুয়ে
শিয়রে জ্বলছে আলো।

হয়ত দেখেছো ঘুমে
স্বপ্নে প্রথম রং,
আমি পাশে নিঃঝুমে
দেখছি ঠোঁটের ঢং।

আমার চোখের পাতা
একটু উঠেছে কেঁপে,
তোমার ছোট্ট মুঠি
কি নিতে চেয়েছো মেপে!

শেষ কবে এই কাঁপা!
বৎসরকাল আগে
যেদিন মিশেছো দেহে,
আদিম পুষ্পরাগে।

এইতো ছোট্ট মাথা,
কতটুকু ভার ধরে!
তবুও রাখলে বুকে
গ্লানিহীন নির্ভরে।

কি ব্যথা জাগালে সখী!
অথচ কি সুখ দিলে!
জেগে জেগে তাই দেখি
তোমাকে ছন্দমিলে।

এ হাত কোথায় শুরু?
ও হাত কোথায় থামে?
একাকার লঘুগুরু
আমাদের বিশ্রামে।

নখে নখ আছি ছুঁয়ে,
লাগছে কি তোর ভালো?
তেমনি আছিস শুয়ে –
শিয়রে জ্বলছে আলো।

কাকতাড়ুয়ার গান

ছাদের কার্নিশে রোজ বসে গান গায়
ঠ্যাং দুলিয়ে দু-লিয়ে এক কাকতাড়ুয়া,
কাকতাড়ুয়ার সাথে কিসের যে মিল পাই!
কাকতাড়ুয়ার সাথে মেলে শুধু কাকতাড়ুয়া।

দুলছে হাওয়ায় একগাছি রেশমি চুল,
আসলে এক-ব্যাটা পায়রা ফেলে গেছে তার
কয়েকটা নরম পালক কানের দুল –
তার রোঁয়ায় লেগে আছে উপহার।

চক দিয়ে খোদাই মুখে হাসি ঝলসায়,
ভর দুপ্পুর বেলা চাঁদি চকচক তার,
যেমন রোদ্দুর পিছলোয় শালিকের ডানায় –
তাও স্টেনলেস স্টীল নয় সস্তা মাটির ভাঁড়।

দুলছে হাওয়ায় কাঁধের শাদা কাফন –
যেন ছোবল মারছে ছোট্ট কেউটে সাপ,
ব্যাকগ্রাউন্ডে আকাশ ছোঁয়া বিজ্ঞাপন –
আয় লোন নিয়ে যা তোর কিসের অভাব!

চক দিয়ে খোদাই গোল্লা দুটো চোখ –
তাও মুছে গেছে নাকের আধখানা,
কি দেখছিস রাতদিনদুপুর বীতশোক?
অমন কার্নিশ পেলে আমিও আটখানা।

রাত নামলে হাওয়ায় হিমের গন্ধ পাই,
আমার গ্লাসের লালের থেকেও একটু লাল
চোখ রাঙিয়ে পেঁচা আমায় ভয় দেখায়,
কাকতাড়ুয়ার গান শুনে – সেও মাতাল।

বানেরঘাটা পক্ষীনিবাস, যেখানে কখনো যাইনি, আর এরকম দেখতেও নয় সেটা

সেই স্মৃতি রক্তিম – সূর্যোদয়,
শান্ত নগরতটে – পাখিরালয়,
বিবিদিষা যানজট করালবদন,
বাঁকা পথে অন্তিম – শ্রীনিকেতন।
.
তাই গতি মঝঝিম – গড়িমসি,
চিন্তাবিহীনতার – দোষে দোষী,
স্বেচ্ছাবিহারী ক্রীড়া তড়াগে উতরি,
ফুটে হৃদে রঙ্গীন – ফুলেশ্বরী।
.
আজও স্মৃতি নন্দিন – দিবাশেষে,
কেটেছে একেলা বেলা – সুখাবেশে,
নীড়গামী খেচরে বিদায় সম্ভাষি
পুনঃ পথ বঙ্কিম – নগরবাসী।

ধাঁইকিড়ি

হয়তো তুমি-ই রাজা –
দুন্দুভি আর শিঙে,
ওই তো তারের ফিঙে
বসল তোমার কাঁধে।
.
হয়তো তুমি-ই বড় –
মেঘের আড়ে বেলা,
পুতুল নিয়ে খেলা
খেলছ একা ছাদে।
.
হয়তো তুমি-ই নেতা –
মাও-সে-তুঙ বা গান্ধী,
হাট্টিমাটিম ছন্দে
লিখলে তোমার চিৎকার।
.
হয়তো আমি-ই বোকা –
কাটছি ছড়া ফালতো,
প্রথমবারের ভুল তো !
মাপ্ করে দাও, Sরকার?